ঢাকা ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বরিশালের পলাশপুরে সোহাগের ত্রাস!, মাদক বাণিজ্য

বার্তা টাইমস বিডি ডেস্ক ঃ  বরিশাল শহরের পলাশপুরে মূর্তিমান আতঙ্ক রূপে প্রকাশ্যে এসেছেন মেহেদী হাসান সোহাগ শিকদার নামের ত্রিশোর্ধ্ব এক যুবক। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রিকশাচালক এই যুবক বিএনপির নাম ভাঙিয়ে পুরো পলাশপুর এলাকায় এক ধরনের ত্রাস চালিয়ে আসছেন। মাদক ক্রয়-বিক্রয় করাসহ গত কয়েক মাসে অন্তত অর্ধডজন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দাদের ওষ্ঠাগত করে তুলেছেন ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কেফায়েত হোসেন রনির স্নেহভাজন সোহাগ।

 

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, মেহেদী হাসান সোহাগ শিকদার বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা কেফায়েত হোসেন রনির সাথে রাজনীতি করলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে তিনি বোল পাল্টে ফেলেছেন। নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় বহুমুখী অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।

 

পুলিশসহ একাধিক স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মূর্তিমান আতঙ্ক সোহাগের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে একাধিক মাদক মামলা হয়। সোহাগের বাবা প্রয়াত শাহজাহান শিকদার আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষালম্বন করে তার নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও করতে দেখা যায়, যার বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

 

সন্ত্রাসী সোহাগের অপকর্মের বেশকিছু ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। এতে সোহাগকে ধারালো দা হাতে লোকজনকে ধাওয়া দিতে দেখা যায়। এই আলোচিত সন্ত্রাসীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে।

 

অভিযোগ আছে, এই যুবকের অনাচারে এলাকাবাসী অস্থির থাকলেও দলীয় প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খোলাস সাহস দেখান না। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় নিরীহ বাসিন্দাদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

সবশেষ মামুন হাওলাদার নামের এক বাসিন্দা বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে যুবক উল্লেখ করেন, সোহাগ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে পলাশপুরে নানামুখী ত্রাস করছেন। এলাকার একটি রিকশার গ্যারেজকে তিনি মাদকের ঘাটি হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সেখানে তিনি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেন এবং প্রতিপক্ষদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ার উদাহরণও আছে। এই সন্ত্রাসী এলাকায় সুদের ব্যবসার সাথেও জড়িত রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় মাদক বাণিজ্য করাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুঠোফোনে সোহাগ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এবং অতীতে তার বিরুদ্ধে যে মাদক মামলা হয়েছিল, সেগুলো রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশে করা হয় বলে উল্লেখ করেন। বিএনপির কোন পদে আছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার দলে কোন পদপদবি নেই।

 

মাদকবিক্রেতা সোহাগ ৫ আগস্টের পরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়ানোর বিষয়টি নিয়ে দলটির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও এক ধরনের অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে তার একাধিক ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার বিষয়টিও অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না।

 

স্থানীয় বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, বহু অপকর্মের হোতা সোহাগকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তিনি একের পর এক অপরাধ করে চলছেন। এবং ৫ আগস্টের পরে তিনি তার সাবেক স্ত্রীর রিকশার গ্যারেজটি দখল করে নিয়ে সেখানে মাদক বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। তার এই অপরাধ রোধে শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানাসহ গোয়েন্দা পুলিশকে ভুমিকা রাখার তাগিদ দিয়েছে স্থানীয় সুশীলমহল।

 

এই বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে অপরাধ করলে কোনো ছাড় নয়।

 

সন্ত্রাসী সোহাগের অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইলে কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি কামাল হোসেন বিস্ময়প্রকাশ করেন। এবং বলেন, অপরাধী তার পরিচয় একটাই তিনি অপরাধী। রাজনৈতিক পরিচয়ে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগসমূহ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’

Tag :
About Author Information

Barta Times bd

জনপ্রিয়

বরিশালে ইলিশ রক্ষা অভিযানে জেলেদের হামলা, আত্মরক্ষায় ফাঁকা গুলিবর্ষণ

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে বরিশালের পলাশপুরে সোহাগের ত্রাস!, মাদক বাণিজ্য

আপডেট সময় : ১১:৩৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বার্তা টাইমস বিডি ডেস্ক ঃ  বরিশাল শহরের পলাশপুরে মূর্তিমান আতঙ্ক রূপে প্রকাশ্যে এসেছেন মেহেদী হাসান সোহাগ শিকদার নামের ত্রিশোর্ধ্ব এক যুবক। গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রিকশাচালক এই যুবক বিএনপির নাম ভাঙিয়ে পুরো পলাশপুর এলাকায় এক ধরনের ত্রাস চালিয়ে আসছেন। মাদক ক্রয়-বিক্রয় করাসহ গত কয়েক মাসে অন্তত অর্ধডজন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে স্থানীয় সাধারণ বাসিন্দাদের ওষ্ঠাগত করে তুলেছেন ৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কেফায়েত হোসেন রনির স্নেহভাজন সোহাগ।

 

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র জানায়, মেহেদী হাসান সোহাগ শিকদার বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা কেফায়েত হোসেন রনির সাথে রাজনীতি করলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পরে তিনি বোল পাল্টে ফেলেছেন। নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে এলাকায় বহুমুখী অপরাধ করে বেড়াচ্ছেন।

 

পুলিশসহ একাধিক স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মূর্তিমান আতঙ্ক সোহাগের বিরুদ্ধে বিগত সময়ে একাধিক মাদক মামলা হয়। সোহাগের বাবা প্রয়াত শাহজাহান শিকদার আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। সাবেক মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষালম্বন করে তার নির্বাচনে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণাও করতে দেখা যায়, যার বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

 

সন্ত্রাসী সোহাগের অপকর্মের বেশকিছু ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। এতে সোহাগকে ধারালো দা হাতে লোকজনকে ধাওয়া দিতে দেখা যায়। এই আলোচিত সন্ত্রাসীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে।

 

অভিযোগ আছে, এই যুবকের অনাচারে এলাকাবাসী অস্থির থাকলেও দলীয় প্রভাবের কারণে কেউ মুখ খোলাস সাহস দেখান না। তার বিরুদ্ধে স্থানীয় নিরীহ বাসিন্দাদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।

সবশেষ মামুন হাওলাদার নামের এক বাসিন্দা বাধ্য হয়ে তার বিরুদ্ধে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বরাবর অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে যুবক উল্লেখ করেন, সোহাগ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে পলাশপুরে নানামুখী ত্রাস করছেন। এলাকার একটি রিকশার গ্যারেজকে তিনি মাদকের ঘাটি হিসেবে গড়ে তুলেছেন। সেখানে তিনি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেন এবং প্রতিপক্ষদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ার উদাহরণও আছে। এই সন্ত্রাসী এলাকায় সুদের ব্যবসার সাথেও জড়িত রয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

 

বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এলাকায় মাদক বাণিজ্য করাসহ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সম্পর্কে জানতে চাইলে মুঠোফোনে সোহাগ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এবং অতীতে তার বিরুদ্ধে যে মাদক মামলা হয়েছিল, সেগুলো রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশে করা হয় বলে উল্লেখ করেন। বিএনপির কোন পদে আছেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তার দলে কোন পদপদবি নেই।

 

মাদকবিক্রেতা সোহাগ ৫ আগস্টের পরে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অপকর্মে জড়ানোর বিষয়টি নিয়ে দলটির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যেও এক ধরনের অস্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে তার একাধিক ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার বিষয়টিও অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন না।

 

স্থানীয় বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের অভিযোগ, বহু অপকর্মের হোতা সোহাগকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তিনি একের পর এক অপরাধ করে চলছেন। এবং ৫ আগস্টের পরে তিনি তার সাবেক স্ত্রীর রিকশার গ্যারেজটি দখল করে নিয়ে সেখানে মাদক বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন। তার এই অপরাধ রোধে শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কাউনিয়া থানাসহ গোয়েন্দা পুলিশকে ভুমিকা রাখার তাগিদ দিয়েছে স্থানীয় সুশীলমহল।

 

এই বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে অপরাধ করলে কোনো ছাড় নয়।

 

সন্ত্রাসী সোহাগের অপকর্মের বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইলে কাউনিয়া থানা পুলিশের ওসি কামাল হোসেন বিস্ময়প্রকাশ করেন। এবং বলেন, অপরাধী তার পরিচয় একটাই তিনি অপরাধী। রাজনৈতিক পরিচয়ে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অভিযোগসমূহ তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।’