
অনলাইন ডেস্ক:: পটুয়াখালীর আদালতে যেন তোলপাড়। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নীলুফার শিরিনের বাসায় পৌঁছে গিয়েছে এক লাল ব্যাগ। ভেতরে দুটি খাম-একটিতে মামলার নথি, অন্যটিতে টাকার বান্ডিল।
অভিযোগ, ব্যাগটি পাঠিয়েছিলেন সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও জেলা জামায়াতের রুকন রুহুল আমিন সিকদার। উদ্দেশ্য-ধর্ষণ মামলার আসামির জামিন ‘সহজ’ করা।
বিচারকের অভিযোগপত্রে স্পষ্ট, ৫০০ টাকার নোটের একটি গোছা ছিল সেই খামে। অনুমান, টাকার অঙ্ক প্রায় ৫০ হাজার। শুধু তাই নয়, এর দু’দিন আগে থেকেই হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠাচ্ছিলেন পিপি।
বিচারক কোনও উত্তর দেননি। ভেবেছিলেন থেমে যাবে চেষ্টা। কিন্তু টাকা পৌঁছনোর পর তিনি মানসিকভাবে এতটাই অপমানিত হয়েছেন যে আর চুপ থাকা সম্ভব হয়নি।
রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ অবশ্য নতুন নয়। বিচারক নীলুফার শিরিন লিখেছেন, আগেও নানা মামলায় আসামিপক্ষের হয়ে তদবির করেছেন এই পিপি।
মনমতো আদেশ না হলে আদালতে সাংবাদিক ডেকে এনে চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এমনকি আলোচিত ‘জুলাই শহীদ জসিমের কন্যা লামিয়া ধর্ষণ মামলা’-তেও তাঁর নাম ঘোরাফেরা করেছে।
ফলে একের পর এক সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন রুহুল আমিন। জেলা আইনজীবী সমিতি বৃহস্পতিবার জরুরি সভায় বসে তাঁর সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করে।
পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানোর নোটিশ। বিষয়টি পাঠানো হয়েছে বার কাউন্সিল থেকে শুরু করে সুপ্রিম কোর্ট, আইন মন্ত্রণালয়-সব দপ্তরে।
তবে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত পিপি। তাঁর দাবি, ‘আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। পিপি হওয়ার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বিচারককে টাকা দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
এখানেই শেষ নয়। বৃহস্পতিবার রাতেই জেলা জামায়াতও জরুরি বৈঠক করে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায়, রুহুল আমিনকে দলীয় দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তদন্তে নামানো হয়েছে পাঁচ সদস্যের কমিটি, হাতে সময় তিন কর্মদিবস।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম আল কায়ছারী বললেন, ‘জেলা আইনজীবী সমিতি যখন তাঁর পদ স্থগিত করেছে, আমরাও একই পদক্ষেপ নিয়েছি। তদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’ ##