ঢাকা ০১:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বরিশালে চরকাউয়ায় শত বছরের পুরাতন মসজিদের কমিটি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরাতন হাজী করিম উদ্দিন দপ্তরী বাড়ি জামে মসজিদের কমিটি গঠন ও হিসাব-নিকাশ নিয়ে ঘটে গেছে তুলকালাম কাণ্ড। এ ঘটনায় এলাকায় মুসুল্লিদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা ঝড় বইছে।

গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জুমা বাদ মসজিদের কমিটি গঠন ও বিগত বছরে মসজিদ উন্নয়নের হিসাব-নিকাশের বিষয় নিয়ে বন্দর থানায় মুসুল্লিদের লিখিত এক অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বে ঘোষিত এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ওই আলোচনা সভায় মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ, বন্দর থানা পুলিশ, সংবাদকর্মীসহ স্থানীয় মুসুল্লিগণ উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে ওই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মৃত হাজী করিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলে শাখাওয়াত হোসেন মনির মসজিদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ২০১৭ সালে ওই মসজিদের পুনঃ নির্মাণ করা শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। যার আয়-ব্যয়ের হিসাব যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এ নিয়ে সম্প্রতি স্থানীয় মুসুল্লিরা প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ক্যাশিয়ার মুসুল্লিদের কাছে আয়-ব্যয়ের সঠিক কোন হিসাব-নিকাশ না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করেন। মুসুল্লিরা সঠিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরূপনে একটি অডিট কমিটি গঠন করলেও ওই কমিটিকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করে উল্টো তাদেরকে নানামূখি চাপে ফেলেন কমিটির সভাপতি। এ নিয়ে কয়েক দফায় মুসুল্লিদের সাথে তর্ক-বিতর্ক ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে বাধ্য হয়ে শান্তিপ্রিয় মুসুল্লিরা বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- চর কাউয়া ইউনিয়নের নয়ানি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ১০০ শত বছরের পুরাতন হাজী করিম উদ্দিন দপ্তরী বাড়ি জামে মসজিদের
প্রতিষ্ঠাতা মৃত হাজী করিম উদ্দিন ১৯২৫ইং সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং মসজিদ সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু জমি-জমা মসজিদের নামে ওয়াকফে করেন। তখনকার ওয়াকফে করার শুরুর দিকে যিনি মোতায়ল্লি ছিলেন উনি ২০০৫ সালে ইন্তেকাল করেন। তদস্থলে তার ছোট ছেলে শাখাওয়াত হোসেন মনির নিজেকে স্বঘোষিত মোতায়ল্লি ঘোষনা করে স্বেচাচরিতভাবে মসজিদের সভাপতির পদ দখল করে আছেন। মসজিদ খানা ২০১৭ইং সালে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হলে অদ্য পর্যন্ত তার কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব মুসল্লিদেরকে দেন নি। মোতায়ল্লি নিজ স্বেচ্ছাচারিত ভাবে সর্বশেষ ২০১৫ইং সালে মনগড়া একক কমিটি গঠন করেন এবং মোতায়ল্লি বাহির থেকে উশৃঙ্খল লোকজন নিয়ে এসে নিজের মনগড়া আবার একটি কমিটি গঠন করার পায়তারা পূর্বক ঘোষণা দিয়েছেন। যার দরুন সাধারন মুসল্লি ও স্বঘোষিত কমিটির সাথে ঝগড়া-বিরোধ সৃষ্টিসহ আশংকাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য- বিগত ৬/০৯/২০১৪ইং শুক্রবার জুমার সময় উক্ত স্বঘোষিত মোতায়ল্লির প্রোরচনায় তার ভাইয়ের বউ (নুপুর বেগম) ঝাড়ু নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে এবং সাধারন মুসল্লিদের মারতে উদ্ধত হয়।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জুমার নামাজ শেষে বন্দর থানার এসআই জলিলের মধ্যস্থতায় সকলে সভায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মুসুল্লিরা পূর্বের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করার দাবি জানান। পাশাপাশি বিগত ৭ বছরে মসজিদ উন্নয়নের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দেখতে চান। তখন মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ক্যাশিয়ার হিসাবের খাতা হারিয়ে গেছে বলে মুসুল্লিদের জানান। এ সময় মুসুল্লিরা সঠিক হিসাব না পেয়ে হইচই শুরু করলে এসআই জলিল মুসুল্লিদের কথা না শুনেই সভাপতির পক্ষে সাফাই গান। এই সুযোগে সভাপতির পক্ষে থাকা লোকজন এসআই জলিলের সামনেই প্রতিবাদী মুসুল্লিদের মসজিদ থেকে বের করে দেন। এ সময় স্থানীয় মজিবর হাওলাদারের ছেলে মোঃ রায়হান আহত হন। এরপর পুনঃরায় শাখাওয়াত হোসেন মনিরকে সভাপতি করে একটি পকেট কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সভাপতির বাসায় ভূড়িভোজ করেন এসআই জলিল। এ নিয়েও মুসু্ল্লিদের মাঝে নানা কানাঘুষা শোনা গেছে।

এ বিষয়ে বন্দর থানার এসআই জলিল বলেন- আমি অভিযোগের ভিত্তিতে ওখানে গিয়েছিলাম, যাতে সেখানে কোন অপ্রীতিকর কোন ঘটনা না ঘটে। আমি কোন সালিশ করিনি।

সভাপতির বাসায় ভূড়িভোজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- তখন বিকেল ৪টা বেজে গিয়েছিলো তাই এক বাড়িতে খাবার খেয়েছি। ওটা সভাপতির বাসা কিনা আমি জানিনা। ভাই খেয়েতো বাচতে হবে।

প্রবীণ এক মুসুল্লি বলেন- ৯ বছর যাবত এই কমিটি মসজিদ উন্নয়ন কাজের কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়নি। মসজিদের নামে কোন ব্যাংক একাউন্ট নাই। টাকা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। হিসাব চাওয়াতেই সকল ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বাইরের লোকজন নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটায়। তিনি জুমার দিন ছাড়া মসজিদে আসেন না। বরিশাল শহরে থাকেন। তারা জোড়-জুলুম করে কমিটিতে রয়েছে। আমাদের আপত্তি থাকা স্বত্তেও তারা পকেট কমিটি করেছে।

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মনির বলেন- বিগত দিনের হিসাব-নিকাশের খাতা হারিয়ে গেছে। আমি সঠিক হিসাব দিতে পারবো না। যদি কেউ বাড়তি টাকা-পয়সা পেয়ে থাকে তা আমি পরিশোধ করবো। ইমাম সাহেবের কাছে যদি কেউ হিসাব দিতে পারে সেই টাকাও আমি দান করবো।

Tag :
About Author Information

Barta Times bd

জনপ্রিয়

নলছিটিতে সেই পরকীয়া প্রেমিক প্রেমিকা অবশেষে পুলিশের খাঁচায়

বরিশালে চরকাউয়ায় শত বছরের পুরাতন মসজিদের কমিটি নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড!

আপডেট সময় : ০৬:০৭:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক ::: বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামের ঐতিহ্যবাহী শত বছরের পুরাতন হাজী করিম উদ্দিন দপ্তরী বাড়ি জামে মসজিদের কমিটি গঠন ও হিসাব-নিকাশ নিয়ে ঘটে গেছে তুলকালাম কাণ্ড। এ ঘটনায় এলাকায় মুসুল্লিদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা ঝড় বইছে।

গত শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জুমা বাদ মসজিদের কমিটি গঠন ও বিগত বছরে মসজিদ উন্নয়নের হিসাব-নিকাশের বিষয় নিয়ে বন্দর থানায় মুসুল্লিদের লিখিত এক অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বে ঘোষিত এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ওই আলোচনা সভায় মসজিদ কমিটির নেতৃবৃন্দ, বন্দর থানা পুলিশ, সংবাদকর্মীসহ স্থানীয় মুসুল্লিগণ উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০০৫ সালে ওই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা মৃত হাজী করিম উদ্দিনের মৃত্যুর পর থেকে তার ছেলে শাখাওয়াত হোসেন মনির মসজিদের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। ২০১৭ সালে ওই মসজিদের পুনঃ নির্মাণ করা শুরু হয়। যা এখনো চলমান রয়েছে। যার আয়-ব্যয়ের হিসাব যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। এ নিয়ে সম্প্রতি স্থানীয় মুসুল্লিরা প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ক্যাশিয়ার মুসুল্লিদের কাছে আয়-ব্যয়ের সঠিক কোন হিসাব-নিকাশ না দিয়ে নানা টালবাহানা শুরু করেন। মুসুল্লিরা সঠিক আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরূপনে একটি অডিট কমিটি গঠন করলেও ওই কমিটিকে কোন প্রকার সাহায্য সহযোগীতা না করে উল্টো তাদেরকে নানামূখি চাপে ফেলেন কমিটির সভাপতি। এ নিয়ে কয়েক দফায় মুসুল্লিদের সাথে তর্ক-বিতর্ক ও সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে বাধ্য হয়ে শান্তিপ্রিয় মুসুল্লিরা বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়- চর কাউয়া ইউনিয়নের নয়ানি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী ১০০ শত বছরের পুরাতন হাজী করিম উদ্দিন দপ্তরী বাড়ি জামে মসজিদের
প্রতিষ্ঠাতা মৃত হাজী করিম উদ্দিন ১৯২৫ইং সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং মসজিদ সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু জমি-জমা মসজিদের নামে ওয়াকফে করেন। তখনকার ওয়াকফে করার শুরুর দিকে যিনি মোতায়ল্লি ছিলেন উনি ২০০৫ সালে ইন্তেকাল করেন। তদস্থলে তার ছোট ছেলে শাখাওয়াত হোসেন মনির নিজেকে স্বঘোষিত মোতায়ল্লি ঘোষনা করে স্বেচাচরিতভাবে মসজিদের সভাপতির পদ দখল করে আছেন। মসজিদ খানা ২০১৭ইং সালে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হলে অদ্য পর্যন্ত তার কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব মুসল্লিদেরকে দেন নি। মোতায়ল্লি নিজ স্বেচ্ছাচারিত ভাবে সর্বশেষ ২০১৫ইং সালে মনগড়া একক কমিটি গঠন করেন এবং মোতায়ল্লি বাহির থেকে উশৃঙ্খল লোকজন নিয়ে এসে নিজের মনগড়া আবার একটি কমিটি গঠন করার পায়তারা পূর্বক ঘোষণা দিয়েছেন। যার দরুন সাধারন মুসল্লি ও স্বঘোষিত কমিটির সাথে ঝগড়া-বিরোধ সৃষ্টিসহ আশংকাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য- বিগত ৬/০৯/২০১৪ইং শুক্রবার জুমার সময় উক্ত স্বঘোষিত মোতায়ল্লির প্রোরচনায় তার ভাইয়ের বউ (নুপুর বেগম) ঝাড়ু নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করে এবং সাধারন মুসল্লিদের মারতে উদ্ধত হয়।

শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী জুমার নামাজ শেষে বন্দর থানার এসআই জলিলের মধ্যস্থতায় সকলে সভায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় মুসুল্লিরা পূর্বের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করার দাবি জানান। পাশাপাশি বিগত ৭ বছরে মসজিদ উন্নয়নের আয়-ব্যয়ের সঠিক হিসাব দেখতে চান। তখন মসজিদ কমিটির সভাপতি ও ক্যাশিয়ার হিসাবের খাতা হারিয়ে গেছে বলে মুসুল্লিদের জানান। এ সময় মুসুল্লিরা সঠিক হিসাব না পেয়ে হইচই শুরু করলে এসআই জলিল মুসুল্লিদের কথা না শুনেই সভাপতির পক্ষে সাফাই গান। এই সুযোগে সভাপতির পক্ষে থাকা লোকজন এসআই জলিলের সামনেই প্রতিবাদী মুসুল্লিদের মসজিদ থেকে বের করে দেন। এ সময় স্থানীয় মজিবর হাওলাদারের ছেলে মোঃ রায়হান আহত হন। এরপর পুনঃরায় শাখাওয়াত হোসেন মনিরকে সভাপতি করে একটি পকেট কমিটি গঠন করা হয়। এরপর সভাপতির বাসায় ভূড়িভোজ করেন এসআই জলিল। এ নিয়েও মুসু্ল্লিদের মাঝে নানা কানাঘুষা শোনা গেছে।

এ বিষয়ে বন্দর থানার এসআই জলিল বলেন- আমি অভিযোগের ভিত্তিতে ওখানে গিয়েছিলাম, যাতে সেখানে কোন অপ্রীতিকর কোন ঘটনা না ঘটে। আমি কোন সালিশ করিনি।

সভাপতির বাসায় ভূড়িভোজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন- তখন বিকেল ৪টা বেজে গিয়েছিলো তাই এক বাড়িতে খাবার খেয়েছি। ওটা সভাপতির বাসা কিনা আমি জানিনা। ভাই খেয়েতো বাচতে হবে।

প্রবীণ এক মুসুল্লি বলেন- ৯ বছর যাবত এই কমিটি মসজিদ উন্নয়ন কাজের কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব দেয়নি। মসজিদের নামে কোন ব্যাংক একাউন্ট নাই। টাকা তারা নিজেদের কাছেই রাখে। হিসাব চাওয়াতেই সকল ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বাইরের লোকজন নিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটায়। তিনি জুমার দিন ছাড়া মসজিদে আসেন না। বরিশাল শহরে থাকেন। তারা জোড়-জুলুম করে কমিটিতে রয়েছে। আমাদের আপত্তি থাকা স্বত্তেও তারা পকেট কমিটি করেছে।

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন মনির বলেন- বিগত দিনের হিসাব-নিকাশের খাতা হারিয়ে গেছে। আমি সঠিক হিসাব দিতে পারবো না। যদি কেউ বাড়তি টাকা-পয়সা পেয়ে থাকে তা আমি পরিশোধ করবো। ইমাম সাহেবের কাছে যদি কেউ হিসাব দিতে পারে সেই টাকাও আমি দান করবো।