
শহীদুল্লাহ সুমন ::: বরিশাল নগরীর পোর্টরোড দখল করে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন মহানগর মৎস্যজীবী লীগের সাবেক সভাপতি খান হাবিব। এতে করে ওই সড়কটিতে সার্বক্ষনিক যানটজ লেগেই থাকছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ- তাদের কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের রশিদ দিয়ে ৩০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করছেন ইজারাদা খান হাবিবের লোকজন।
ধারণা করা হচ্ছে- পোর্টরোড সড়কটি দখল করে বাজার বসানো প্রায় দেড় শতাধিক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিদিন আনুমানিক ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। সে হিসেবে সেখান থেকে মাসে আড়াই থেকে ৩ লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- শামীম ও জামাল নামের দুই ব্যক্তি সিটি করপোরেশন থেকে খান হাবিবের নামের মাছঘাট ও হাট ইজারার রশিদ দিয়ে সড়ক দখল করা দোকানিদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করছে। এ সময় প্রকারভেদে ৩০ টাকা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত খাজনা আদায় করছেন তারা। তখন সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে টাকা উঠানো বন্ধ করে দৌড়ে চলে যান খান হাবিবের অফিসে। সংবাদকর্মীরা তাদের পিছু নিলে সেখানে গিয়ে দেখা হয় খান হাবিবের ম্যানেজার মোঃ মুরাদ খানের সঙ্গে। তিনি বলেন- সিটি করপোরেশন রাস্তাসহ বাজার ইজারা দিয়েছে। তাই সুবিধা অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা সড়কের উপর বাজার বসিয়েছে।
সিটি করপোরেশন সড়কে বাজার বসানোর অনুমতি দিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন- আমাদের কাছে সড়কে বাজার বসানোর চুক্তিপত্র রয়েছে, আপনি (প্রতিবেদক) চাইলে দেখতে পারেন। পরে তিনি চুক্তিপত্র বের করে দেখালে সেখানে কোথায় সড়কের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়নি। তখনি তিনি ভোল পাল্টে বলেন- আমাদের বাজারে জায়গা সল্পতার কারণে ব্যবসায়ীরা সড়কে যে যার মতো বসেছে। আমরা বার বার তাদের নিষেধ করলেও তারা তা মানছেন না।
আপনাদের নির্ধারিত বাজারের বাইরে বসলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া অবৈধ কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- এটা অবৈধ হবে কেন? আমরাতো বাজার ইজারা নিয়েছি। আপনি খান হাবিব ভাইর সাথে কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে খান হাবিবের মু্ঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে- ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন খান হাবিব। কিন্তু তার লোকজন বাজার ইজারার নামে সড়ক দখল করে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
সড়ক দখলকারী এক ব্যবসায়ী বলেন- আমরা সিটি করপোরেশনকে খাজনা দিয়ে ব্যবসা করছি। প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের রশিদের মাধ্যমে আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হচ্ছে। আমাদের বলা হয়েছে- এই সড়কটিসহ বাজার ইজারা নিয়েছেন খান হাবিব। তাই সড়কে বসেই ব্যবসা করছি।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন- এই সড়কের উপরে বহু বছর যাবত ব্যবসা করে যাচ্ছি। আমরা জানি এটা বাজারের জায়গা। তাই সড়কের উপরেই বসেছি।
মারুফ নামের এক পথচারী বলেন- এ সড়কটিতে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। সড়কটির তিন ভাগের দুই ভাগ দখল করে বাজার বসানো হয়। এতে করে যান চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়। দ্রুত সড়কটি দখলমুক্ত করতে প্রশাসেনর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
হেলাল নামের এক অটোচালক বলেন- এখানে একবার গাড়ি নিয়ে ঢুকলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়। পুরো সড়কটি অবৈধভাবে দখল করে বাজার বসানো হয়েছে। আমরা ব্যাপক ভোগান্তিতে রয়েছি। এর থেকে পরিত্রান চাই।’
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারী বলেন- সড়ক দখল করে বাজার বসানোর সুযোগ নেই। আর আমরা সড়কে বাজার বসানোর কোন অনুমতি দেইনি। বিগত দিনেও ওখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, খুব শিঘ্রই আবার অভিযান পরিচালনা করা হবে।